কক্সবাজার ইসলামীয়া মহিলা কামিল মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুহাম্মদ জাফরুল্লাহ নূরীকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে। মাদ্রাসার গভর্নিং বডিতে স্থান না পাওয়া একটি সিন্ডিকেটের প্ররোচনায় কক্সবাজার আদালতে মামলা করা হয়। মামলায় জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে কমিটি গঠনের মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয় অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাফরুল্লাহ নূরীর বিরুদ্ধে। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি সদর মডেল থানায় তদন্তের নির্দেশ দেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক আলমগীর শাহ প্রতিবেদন জমা দেন। গত ৩ মার্চ মামলার বাদী মামলার আপোষ দিলেও বিজ্ঞ আদালত মামলায় উল্লেখিত তিনজনের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করে। এদিকে, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুহাম্মদ জাফরুল্লাহ নূরী বাংলাদেশের প্রথম মহিলা মাদ্রাসা কক্সবাজার ইসলামীয়া মহিলা কামিল মাদরাসায় দীর্ঘ জীবন কর্মরত থাকার পর বিগত ২০২০ সালের ৩০ আগস্ট সুনামের সাথে অবসর গ্রহণ করেন। অধ্যক্ষ থাকা অবস্থায় জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ এর আলোকে তিনি কক্সবাজার জেলার শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ হিসেবে বার বার নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। এছাড়াও নারী শিক্ষায় বিশেষ অবদানে তিনি জাতীয়ভাবে বিভিন্ন সম্মাননায় ভূষিত হন। শিক্ষকতার দীর্ঘ জীবনে কখনো অন্যায়ের সাথে আপোষ করেননি তিনি। শুধুমাত্র ইসলামীয়া মহিলা কামিল মাদ্রাসা ছাড়া তিনি কক্সবাজারে আরো ২টি দাখিল মাদ্রাসা ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেছেন। কক্সবাজারের বরেণ্য শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ জাফরুল্লাহ নূরী ২০১৬ সালে জেলার শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ নির্বাচিত হওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলার সৌভাগ্য অর্জন করেন। তৎকালীন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলার ৪ জন মাননীয় সংসদ সদস্য, মহিলা সাংসদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সকলের উপস্থিতিতে এই সম্মানে ভূষিত হন বরেণ্য শিক্ষাবিদ অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুহাম্মদ জাফরুল্লাহ নূরী। ইসলামীয়া মহিলা কামিল মাদরাসা থেকে অবসরে যাওয়ার পর মাদরাসার একজন প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার উন্নয়নে খোঁজ রাখতেন প্রতিনিয়ত। মাদ্রাসার মেনেজিং কমিটিতে স্থান না পেয়ে ডায়মন্ড কাসেম নামের এক ব্যক্তি ও তার সিন্ডিকেট মাদরাসার শান্ত পরিবেশকে অশান্ত ও শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বাধা সৃষ্টি করতে এবং মাদ্রাসা ধ্বংস করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। অসাধু এই সিন্ডিকেটের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুহাম্মদ জাফরুল্লাহ নূরীকে মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে। শুধুমাত্র মিথ্যা মামলায় আসামি করে এই সিন্ডিকেট ক্ষান্ত হননি, বরং তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তাকে মোটা অংকের টাকায় ম্যানেজ করে মুহাম্মদ জাফরুল্লাহ নূরীর বিরুদ্ধে সাঁজানো প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। অধ্যক্ষ মুহাম্মদ জাফরুল্লাহ নূরীর পুত্র সদর উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আরিফুল্লাহ নূরী জানান, ২০২৩ সালে জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর জালিয়াতি করেছে মর্মে মামলায় আমার বাবাকে আসামি করা হয়েছে। আমার বাবা ২০২০ সালে মাদ্রাসা থেকে অবসরে যান। এছাড়াও মামলার উল্লেখিত সময়ে আমার পিতা মুহাম্মদ জাফরুল্লাহ নূরী কোনোভাবেই মাদরাসা সংক্রান্ত কোনো ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না। তখন তিনি ম্যানেজিং কমিটিতেও ছিলেন না। তাহলে কীভাবে তিনি জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর জালিয়াতি করলেন? মাদ্রাসা সংক্রান্ত কোনো ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত না থাকায় আমার পিতার কোনো ধরনের কাগজপত্রে স্বাক্ষর করার ক্ষমতা নেই। যেখানে উনার স্বাক্ষর করার এখতিয়ার ছিল না, সেখানে কীভাবে তিনি স্বাক্ষর জালিয়াতি করলেন? যদি স্বাক্ষর জালিয়াতি হয়ে থাকে, সেটার জন্য অন্যকেউ জড়িত থাকতে পারে। যিনি কোনো ধরনের দায়িত্বে জড়িত ছিলেন না, কীভাবে তিনি জালিয়াতি করলেন মর্মে মামলার আসামি হয়? সকলের কাছে এই প্রশ্ন রইলো। আমার বাবা মাদ্রাসার কোনো ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত না থাকা সত্ত্বেও মামলায় জড়ানো হয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীরা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমার বাবাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে। সাংবাদিক আরিফুল্লাহ নূরী বলেন, শুধু মামলার আসামি করেনি তারা। তদন্তকারী কর্মকর্তা শহর পুলিশ ফাঁড়ির আইসি ইন্সপেক্টর আলমগীর শাহকে ম্যানেজ করে আমার বাবার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে ইন্সপেক্টর আলমগীরের সাথে দেখা করেছি, তিনি বলেন- অধ্যক্ষ জাফরুল্লাহ নূরী আপনার বাবা, সেটা আমি জানতাম না। আপনি আমার সাথে যোগাযোগ করেননি। যোগাযোগ করলে আপনার বাবার পক্ষে প্রতিবেদন দিতাম। এছাড়াও আমাকে বাদীপক্ষ বারবার বিরক্ত করার কারণে আমি প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। মামলায় আমার বাবা জড়িত ছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, উনিতো অবসরে গেছেন। এছাড়াও আমি জানতে চেয়েছি, স্বাক্ষর জালিয়াতি মামলায় আমার বাবার জড়িত থাকার বিষয়ে একটি প্রমাণ দেখান। তিনি দেখাতে পারলেন না। চুপ ছিলেন। আরিফুল্লাহ নূরী বলেন, ইন্সপেক্টর আলমগীর শাহ আমার বাবার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। একজন বরেণ্য শিক্ষাবিদের সম্মানহানি করতে অসাধু ডায়মন্ড কাসেম সিন্ডিকেট ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এছাড়াও পুলিশ কর্মকর্তার মামলার প্রতিবেদনে আমার বাবা জড়িত রয়েছে, এমন কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দিতে পারেননি তিনি। মনগড়া প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। অধ্যক্ষ জাফরুল্লাহ নূরী বলেন, মামলায় উল্লেখিত সময়ে আমি মাদ্রাসার কোনো ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত নেই। ২০২০ সালের ৩০ আগস্ট অবসর গ্রহণ করি। আমার বিরুদ্ধে এই মামলা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যে প্রণোদিত ও ষড়যন্ত্রমূলক। এছাড়াও মামলার বাদী আদালতে আপোষ দিয়েছেন। এই ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচন হবে শীঘ্রই। ইসলামীয়া মহিলা কামিল মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল আবছার বলেন, সাবেক অধ্যক্ষ জাফরুল্লাহ নূরীকে মামলায় জড়ানো সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যে প্রণোদিত। তিনি বর্তমানে গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি হলেও ঘটনার সময় কোনো ধরনের মাদ্রাসা সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না। মামলার বাদী আপোষ নামা জমা দিয়েছেন আদালতে। এরপরেও পুলিশের মিথ্যা প্রতিবেদনে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুহাম্মদ জাফরুল্লাহ নূরীকে হয়রানি করা হচ্ছে।