নিজস্ব প্রতিবেদক
ঈদের আগে আগুনে পুড়েছে রাজধানী ঢাকা। বঙ্গবাজার এবং নিউমার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়েছে শত শত স্থাপনা। জ্বলে ছাই হয়ে গেছে মানুষের কোটি কোটি টাকার জিনিসপত্র। রাজধানীজুড়ে যখন আগুন জ্বলছিলো তখন চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকার ব্যবসায়ীদের বুকেও কাঁপন ধরেছিলো। সে যাত্রায় বেঁচে যায় চট্টগ্রামবাসী। তবে ঈদের পর থেকে আগুনের চোখ যেন চট্টগ্রামের ওপর থেকে সরছেই না। গত কয়েকদিনে চট্টগ্রামের পৃথক কয়েকস্থানে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুড়েছে মানুষের থাকার ঘর, লাখ লাাখ টাকার সম্পদ। এর আগে বিষ্ফোরণ নাজেহাল করেছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের মানুষদের।
জানা গেছে, গত শুক্রবার ২৮ এপ্রিল নগরীর পাহাড়তলীর ঝর্ণাপাড়া এলাকায় এক বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৫ ইউনিটের চেষ্টায় দীর্ঘক্ষণ পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এতে হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও পুড়ে যায় ৫টি বসতঘর। নগদ অর্থ এবং আসবাপত্রসহ প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ক্ষতি হয় এই অগ্নিকাণ্ডে।
এর পরেরদিন শনিবাার চট্টগ্রাম নগরীর দেওয়ানহাটে একটি পরিত্যক্ত টায়ারের গুদামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছ। এদিন দুপুর সাড়ে ১২টায় এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। অল্প সময়ের ব্যবধানে আগুন পাশের বস্তিতে ছড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। অগ্নিকাণ্ডের পর আগুনের লেলিহান শিখা ও ধোঁয়ার কুণ্ডলী অন্তত ৩-৪’শ ফুট উপরে উঠে গেলে আশাপাশের বস্তিগুলোতে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ততক্ষণে পুড়ে যায় লাখ লাখ টাকার টায়ার এবং আশেপাশের বস্তিঘর।
এদিকে রোববার বিরতি দিয়ে সোমবার আবারও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে চট্টগ্রামে। এদিন বেলা পৌনে ১১টার দিকে বাকলিয়ার রাজাখালীর তুলাতলী বস্তিতে আগুন লাগে। খবর পেয়ে প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট এ আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরে তাদের সঙ্গে আগ্রাবাদ থেকে আরও দুটি ইউনিট যোগ দেয়। তাদের আধাঘণ্টার চেষ্টায় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে তার আগেই বস্তির ৪০টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। নিজেদের চোখের সামনেই জ্বরে আঙ্গার হয়ে যায় বসতঘর ও তিলে তিলে গড়ে তুলা আসবাপত্রসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। এর আগে গত ১৮ এপ্রিল এই এলাকায় একটি শুঁটকির কোল্ড স্টোরেজে বিস্ফোরণের পর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
বিরতিহীনভাবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ভয় ধরাচ্ছে নগরবাসীকে। কখন কোন স্থানে আগুন লাগে সেই শঙ্কায় দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। শুধু নগর নয় গ্রামীণ এলাকায় বাড়ছে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। এতে করে বসতঘর হারিয়ে বিপাকে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।
জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রাম বিভাগের সহকারী পরিচালক এম ডি আবদুল মালেক চট্টগ্রাম খবরকে বলেন, সামন্য অসচেতনা থেকে বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে অনেক সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি যেমন হয় তেমনি প্রাণহানিও ঘটে। তাই অফিস, কলকারখানা, বাসাবাড়িতে ইলেক্ট্রেশিয়ান দিয়ে নিয়মিত নিজেদের বৈদ্যুতিক লাইনগুলো চেক করে লুজ কানেকশন ঠিক করলে বড় দুর্ঘটনা থেকে বাঁচা যায়। পাশাপাশি যারা গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করেন তারা আরও বেশী সচেতন হতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম নগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজার, টেরিবাজার, লালখান বাজার আমিন সেন্টার, জিইসি সেন্ট্রাল প্লাজ. স্যানমার ওশান সিটি, ষোলশহরের শপিং কমপ্লেক্স, আগ্রাবাদের আখতারুজ্জামান সেন্টারসহ নগরীর জনসমাগম যেসব মার্কেটে হয় আমরা সেসব মার্কেট ভিজিট করে আমাদের নির্দেশনা দিয়েছি। মাননীয় জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও আমাদের সঙ্গে ছিলেন। আশা করছি সবাই সচেতন হবেন।
অগ্নিঝুঁকিতে অর্ধশত মার্কেট
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বন্দর নগরী চট্টগ্রামের প্রায় অর্ধশত মার্কেট, বেশ কিছু বস্তি এবং ২৪টি কন্টেইনার ডিপো অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার, তামাকমুণ্ডি লেইন, নুপুর মার্কেট, টেরি বাজার, হকার্স মার্কেট, খাতুনগঞ্জসহ বেশ কিছু স্থানের মার্কেটগুলোর অবস্থা নাজুক। বৈদ্যুতিক সংযোগেও নিরাপত্তার অভাব আগুনের ঝুঁকি দিন দিন বাড়াচ্ছে।
এছাড়া নগরীর খলিফাপট্টি এলাকাও রয়েছে অগ্নিঝুঁকিতে। ছোট বড় ৪ শতাধিক কারখানা আর ৩শর বেশি দোকানের একটিতেও নেই প্রয়োজনীয় অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা। অপরিকল্পিত ভবন, সরু গলিপথ, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিদ্যুতের লাইন ঝুঁকি বাড়িয়েছে বহুগুণ।
মার্কেট কর্তৃপক্ষকে ফায়ার সার্ভিস বারবার নোটিশ দিলেও কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এসব স্থানের কোন এক জায়গায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে বিরাট ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিতে জেলা প্রশাসনের ১১ সিদ্ধান্ত
গত ১০ এপ্রিল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত সভায় চট্টগ্রামের মার্কেটগুলোয় অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১১টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-মার্কেটগুলোয় প্রতিটি দোকানে ফায়ার লাইসেন্সসহ অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখতে হবে, প্রতিটি মার্কেটে পানির রিজার্ভ ট্যাংক ও গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে, মার্কেটকে আগুন মোকাবিলায় নিজস্ব পরিকল্পনা করতে হবে, মার্কেটগুলোয় সিসি ক্যামেরা লাগাতে হবে, যাবতীয় কেবল মাটির নিচে নেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে, বিদ্যুতের লাইনের তার সময়োপযোগী করতে হবে। নগরীর বিভিন্ন এলাকার পুকুর অবৈধ দখলমুক্ত করে চারদিকে হাঁটার জন্য ওয়াকওয়ে নির্মাণে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করা হবে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে তাদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।