বাংলাদেশ আমার অহংকার এই স্লোগান নিয়ে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাব সৃষ্টিকাল থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতারসহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম অস্ত্রধারী সস্ত্রাসী, ডাকাত, ধর্ষক, দুর্ধষ চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেফতার এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদক উদ্ধারের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করায় সাধারণ জনগনের মনে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
নিহত ভিকটিম এবং আসামী আলী আজগর ২০১৫ সালের ১০ নভেম্বর নোটারি পাবলিকের ঘোষণার মাধ্যমে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর তারা চট্টগ্রাম শহরে বসবাস করছিলেন। বিয়ের কিছুদিন পর ভিকটিম তার বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসে। গত ১২ জানুয়ারি ২০১৬ ইং তারিখে সকাল আনুমানিক ১০০০ ঘটিকায় ভিকটিম স্বামীর ব্যবসার জন্য তার বাবার কাছে ১ লক্ষ টাকা চাইলে তার বাবা টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। ঐদিন দুপুর আনুমানিক ১৪৩০ ঘটিকায় ভিকটিম বাড়ির কাউকে কিছু না বলে তার বাবার বাড়িতে হতে চলে আসে। ভিকটিমের বাবা ধারণা করেন তার মেয়ে স্বামীর কাছে চলে গেছে।
পরবর্তীতে গত ২০ জানুয়ারি ২০১৬ইং তারিখ সকাল আনুমানিক ০৭০০ ঘটিকায় ভুজপুর থানাধীন বাদুরখিল এলাকার একটি খামার বাড়ির গাছে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় ভিকটিমের লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ভুজপুর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু হয় যার মামলা নং ০২ তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০১৬। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভিকটিমের মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটনের জন্য লাশ ফরেনসিক ও মেডিসিন বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে ময়না তদন্তের রিপোর্টে ভিকটিমকে ধর্ষণ ও শ্বাসরোধ করে হত্যার আলামত পাওয়া গেলে অপমৃত্যু মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।
ভিকটিমের মৃতদেহ পাওয়ার পর হতে তার স্বামী আলী আকবর এলাকা ছেড়ে পালিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। পুলিশ মামলা তদন্ত করে ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি আসামী আলী আকবর এর বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। বিচার চলাকালীন সময়ে আসামী আলী আকবর পলাতক থাকে। আসামী দীর্ঘদিন পলাতক থাকায় বিজ্ঞ আদালত সাক্ষীদের সাক্ষ্য শেষে আসামীর অনুপস্থিতিতে গত ১৯ মার্চ ২০২৩ ইং তারিখে ভিকটিমকে নৃশংসভাবে ধর্ষণ ও শ্বাসরোধ করে হত্যার দায়ে আসামীকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন।
র্যাব-৭, চট্টগ্রাম বর্ণিত হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামীকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরধারী এবং ছায়াতদন্ত অব্যাহত রাখে। নজরধারীর এক পর্যায়ে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম জানতে পারে, বর্ণিত আসামী আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজিদ এলাকায় অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল গত ০৪ মে ২০২৩খি. তারিখে বর্ণিত স্থানে অভিযান পরিচালনা করে আসামী আলী আকবর(২৯), পিতা- মৃত হাচি মিয়া, সাং- ডলু আরলিয়া, থানা- ফটিকছড়ি, জেলা- চট্টগ্রামকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে সে বর্ণিত মামলার মৃত্যুদন্ড সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী মর্মে স্বীকার করে। গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় সে আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে দীর্ঘ ০৭ বছর যাবৎ চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে ছিল।
গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাবাসাবাদে আরও জানা যায় যে, ২০১৫ সালে মোবাইলের মাধ্যমে ভিকটিমের সাথে তাদের প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন হয়। তাদের সম্পর্কের এক পর্যায়ে আলী আকবর ভিকটিমকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ফুঁসলিয়ে বাড়ি হতে অন্যত্র নিয়ে আসে এবং সেখানে কিছুদিন থাকার পর নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে তাদের বিবাহের হলফনামা সম্পাদন করে। বিয়ের কিছুদিন পর আলী আকবর ব্যবসা করার জন্য ভিকটিমকে তার বাবার কাছ হতে ১ লক্ষ টাকা নিয়ে আসতে বলে এবং টাকার জন্য ভিকটিমকে প্রায় সময়ই শারীরিক নির্যাতন করত। কিন্তু ভিকটিমের বাবা একজন দরিদ্র কৃষক হওয়ায় টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আলী আকবর ভিকটিমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে আত্মহত্য বলে চালিয়ে দেয়ার জন্য ওড়না দিয়ে ভিকটিমকে গাছের সাথে ঝুলিয়ে রেখেছিল। গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় যে, তিনি তার পূর্বের স্ত্রীর কথা গোপন রেখেই ভিকটিমকে বিয়ে করেন এবং ভিকটিমকে ৮ দিন যাবৎ ভুজপুর থানাধীন বাদুরখিল এলাকার একটি খামারবাড়িতে আটকে রেখে ধর্ষণ করেন এবং ২০ জানুয়ারি ভিকটিমকে হত্যা করে একটি গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে দেন। এছাড়া আসামি ভুক্তভোগী তরুণীকে বিয়ে করলেও তা নিবন্ধন করেননি এবং নোটারি পাবলিকের বিয়ের ঘোষণাটিও মিথ্যা ছিল।
গ্রেফতারকৃত আসামী সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।