মো: আব্দুল ওহাব,ঠাকুরগাঁও (প্রতিনিধি)
দেশের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্য গম চাষে শীর্ষ জেলা ঠাকুরগাঁও। উত্তরাঞ্চলের জেলাটির মাটি ও আবহাওয়া গম চাষের উপযোগী হওয়ায় খাদ্যশস্যটির ভালো ফলন পান কৃষক। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় অন্যান্য শস্যের তুলনায় কম মূল্য পাওয়ায় কৃষক গম চাষে অনাগ্রহী হয়ে উঠছেন। পাঁচ বছরে গম আবাদি জমির পরিমাণও নেমে এসেছে অর্ধেকে।জেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, জেলায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬৭ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়। চার বছরের মাথায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে খাদ্যশস্যটির আবাদি জমির পরিমাণ নামে ৩৬ হাজার ৬৫৭ হেক্টরে। এ থেকে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩২৮ টন গম উৎপাদন হয়৷ আর চলতি মৌসুমে (২০২৩-২৪) ৩৬ হাজার ৬৫৭ হেক্টর জমিতে গম আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর বিপরীতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩২৮ টন।৷ জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ৩০ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে আবাদ সম্পন্ন হয়েছে।আগে জেলায় গমের চাষাবাদ বেশি থাকলেও এখন বছর বছরই কমছে আবাদি জমির পরিমাণ।৷ পাঁচ বছরে গমের আবাদ প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। গমের বীজ পেতে নানা বিড়ম্বনা ও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ও সরকারি দাম কম থাকায় গম চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষীরা। গমের পরিবর্তে ভুট্টা, আলু ও সরিষা চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা।খাদ্যশস্যটির আবাদ ও উৎপাদন কমায় গম কেনার লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হচ্ছে সরকারের। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে দেশে ৫০ হাজার টন গম কেনা হয়। এর মধ্যে ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে কেনা হয় ৬ হাজার ৬০৯ টন। পরের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে ঠাকুরগাঁও থেকে ১২ হাজার ৩১০ টন গম কেনার কথা থাকলেও কেনা হয়েছে ২৪ হাজার ৬১ টন। এর পরে কৃষকেরা গম সরকারিভাবে না বিক্রি করায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী গম কেনা সম্ভব হয়নি।বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা এলাকার কৃষক শ্রী জীবন রায় বলেন, দুই বছর থেকে গম চাষ কমিয়ে দিয়েছি, এখন ভুট্টা চাষ করছি। এটাতে হয়রানি কম, দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, আবাদ কম হওয়ায় আমরা পর্যাপ্ত গম ক্রয় করতে পারছি না। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাইরে বেশি দাম পাওয়ায় কৃষকেরা আমাদের কাছে বিক্রি করছেন না।ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, গম উৎপাদনে শীর্ষ জেলা হলেও দিন দিন চাষ কমে যাচ্ছে। আমরা লক্ষ্য করছি গমের পরিবর্তে ভুট্টা চাষে তারা বেশ লাভবান হচ্ছেন। সে কারণে ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন।৷গমের আবাদ কমে গেলে আমদানি বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তাই গম চাষ বাড়াতে আমরা প্রচার-প্রচারণা ও প্রণোদনার মাধ্যমে বীজ ও সার দেয়ার ব্যবস্থা করছি।ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন গম উৎপাদনে দেশের শীর্ষ জেলা হলেও আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। গম চাষে বীজ ও সার পেতে কোনো ধরনের কারসাজি হলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।