শাহাব উদ্দিন সিকদার :কক্সবাজার
কয়েকবছর আগেও শুষ্ক মৌসুমে সবুজ শাক-সবজিতে ভরপুর থাকতো বাঁকখালীর বুক ও সমতল ভূমি। সেখানে এখন হচ্ছে তামাক চাষ।রামু ও চকরিয়া উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রামুতে ১৭০ হেক্টরের অধিক ও চকরিয়ায় ৬২০ হেক্টরের অধিক জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। তবে নদীর তীরে করা তামাক চাষের সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। মাঠের প্রায় ৬০ শতাংশ ফসলি জমিতে তামাকের আবাদ হয়েছে। রামুর রাজারকুল,মৈষকুম,গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়ার নাপিতেরচর, কাউয়ারখোপ, মনিরঝিল, ফাক্রিকাটা ঘুরে দেখা গেছে, বাঁকখালী নদীর বুকে এবং দুই তীরে শুধু তামাকের আবাদ। পাশাপাশি এলাকার ফসলি জমিগুলোও তামাকের দখলে। একই চিত্র চকরিয়ার বোয়াবিলছড়ি, কাঁকড়া, ফাঁসিয়াখালী, মানিকপুর, সুরাজপুর ও মাতামুহুরীর বুকে এবং দুই পাড়ে। নদীবেষ্টিত এসব এলাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে তামাক চাষ না করতে সরকারি নির্দেশনামূলক সাইনবোর্ড দেখা গেছে।ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫-এর ধারা ৫ ও ১১-তে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে তামাকজাত দ্রব্যের পৃষ্ঠপোষকতা ও তামাকজাতীয় ফসল উৎপাদন, ব্যবহার নিরুৎসাহিতকরণে ব্যবস্থা গ্রহণের শর্ত। কিন্তু তামাক কোম্পানিগুলো এসবের কিছুই মানছে না। তামাক চাষ প্রসারে উল্টো প্রণোদনা দিচ্ছে কৃষকদের। কাউয়ারখোপে কৃষক মো. আবদুস ছোবহান ৭ কানি জমিতে তামাক চাষ করেছেন। তিনি জানান, একরপ্রতি ১০ হাজার টাকা সুদমুক্ত ঋণ দিয়েছে কোম্পানি। পাশাপাশি বীজ, সার ও পোকা দমনে বিশেষ ধরনের বিষও দিয়েছে কোম্পানিটি।কচ্ছপিয়ানাপি
তেরচর কৃষক আবুল কালাম বলেন, তামাক চাষে মোটা অংকের টাকা পাওয়া যায়। তা ছাড়া তামাক কোম্পানি সুদমুক্ত ঋণ দেয়। শীতকালীন শাক-সবজির দাম না পাওয়ায় অনেকেই তামাক চাষে ঝুঁকছেন। রামু ও চকরিয়া কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এই দুই উপজেলার সেসব জমিতে শীতকালীন শাক-সবজি আবাদ হতো, এখন অধিকাংশ জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। নদীর বুকে ও তীরে তামাক চাষের ফলে কী ক্ষতি হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে নদী নিয়ে কাজ করা সংগঠন রিভারাইন পিপলের মহাসচিব শেখ রোকন বলেন, ‘তামাক চাষের ফলে আমাদের প্রতিবেশগত ক্ষতিটা হবে বেশি। দিনদিন এই চাষ বৃদ্ধির ফলে আমাদের উৎপাদনমুখী কৃষি ও ভয়াবহ কীটনাশক ব্যবহারে নদীর পানি ও মাছের স্থায়ী ক্ষতি হবে, যা অপূরণীয়।’ সূত্রমতে, ৪০ শতক জমির তামাক পোড়াতে ৫০ মণ লাকড়ি প্রয়োজন হয়। সে হিসেবে এ বছর ৭৯০ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত তামাক পোড়াতে প্রায় ১০ হাজার টনের বেশি লাকড়ির প্রয়োজন হবে। যার অধিকাংশ আসে টেকনাফ, ফাঁসিয়াখালী ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির গহিন বনাঞ্চল থেকে। জানা গেছে, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) এর আগে বাঁকখালী নদী বাঁচাবার জন্য বিভিন্ন নির্দেশনা চেয়ে জনস্বার্থে একটি মামলা করে। এর আদেশও পেয়েছে। কিন্তু অনেকাংশে বাস্তবায়ন হয়নি।সরকারিভাবে কক্সবাজারের প্রধান দুই নদীর জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় হস্তক্ষেপ জরুরি বলে মনে করেন বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা। পাশাপাশি তামাক আবাদে নিয়ন্ত্রণ আনতে যথোপযোগী আইন ও প্রয়োগের গুরুত্বও রয়েছে বলে জানান তাঁরা।