মোঃ আশরাফুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি।
ঠাকুরগাঁও পাক হানাদার মুক্ত হয় ১৯৭১ সালে ৩রা ডিসেম্বর।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে সভাকক্ষে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন, হরিপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও হরিপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো,জিয়াউল হাসান মুকুল ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো, আরিফুজ্জামান, অফিসার ইনচার্জ এবিএম ফিরোজ ওয়াহিদ ও মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার বাবু নগেন কুমার পাল ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আলমগীর, সহ-সভাপতি মো,আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ হরিপুর উপজেলা শাখা ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো,মনোয়ারুল ইসলাম রিপন, বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আগত মুক্তিযোদ্ধাগণ, বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ, বিভিন্ন দপ্তরের সরকারী কর্মকর্তাগণ ও প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক বৃন্দ।
স্মৃতি চারণ করেন, বীরমুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার নগেন কুমার পাল। তিনি জানান, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ৬ নং সেক্টর কমান্ডার খাদেমুল বাসারের নেতৃত্বে দিকনির্দেশনা নিয়ে,বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আজগর আলী কমান্ডার ও তিনি ডেপুটি কমান্ডার ১৩ জন্য সদস্য নিয়ে আমরা পীরগন্জের এলাকায় রনসীয়া এবং দক্ষিণ জাবরহাট ও পীরগন্জের মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যৌথভাবে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। ঐ এলাকায় অপরিচিত হওয়ায় যুদ্ধ পরিচালনা করতে কষ্ট হচ্ছিল। তারপর তারা নিজ বাড়ি বালিহারা চলে আসে এবং সেই গ্রাম থেকেই যুদ্ধ পরিচালনা করেন। পরবর্তীতে কমান্ডার মরহুম আজগর আলী নেতৃত্বে ধীরগন্জ হাটে অস্থায়ী ক্যাম্প করে যুদ্ধ করেন, দিনের বেলায় আমরা শিংহাড়ী, বুজরুক, রুহিয়া, মানিখাড়ী সহ বিভিন্ন এলাকায় দায়িত্ব পালন করে রাতে চলে যান । তিনি জানান, পাশাপাশি হরিপুর কালিগন্জে হাট এলাকায় মিত্রবাহিনী ক্যাম্প করে আমাদের সহায়তা করেছিল। ডিসেম্বরের মাসে শুরুতে পশ্চিম বনগাঁ হয়ে অগ্রসর হতে-হতে কাতিহার হয়ে শিবগঞ্জ তারপর ঠাকুরগাঁও কালেক্টর ভবনে গিয়ে ৩রা ডিসেম্বরে স্বাধীন জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
অপরদিকে তিনি জানান, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ঠাকুরগাঁও মহকুমায় ১০টি থানা ছিল। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসই তেঁতুলিয়া থানা ছিল শত্রুমুক্ত। এই মুক্তাঞ্চল থেকেই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করা হতো। ৬ নম্বর সেক্টরের আওতায় মুক্তিযোদ্ধারা মিত্র বাহিনীর সহায়তায় ২৯ নভেম্বর পঞ্চগড় থানা দখলে নেন। পাকিস্তানি বাহিনী পিছু হটতে থাকে।
তারা পঞ্চগড়ের ময়দানদিঘী, তারপর বোদা এবং সব শেষে ঠাকুরগাঁও থানার ভুল্লিতে ঘাঁটি গাড়ে। মুক্তিযোদ্ধারা যাতে না আসতে পারে, মুক্তিযোদ্ধারা বোমা মেরে ভুল্লি ব্রিজটি উড়িয়ে দেয়। মুক্তিযোদ্ধারা ১ ডিসেম্বর রাতে ব্রিজের অদূরে রাতভর সম্মুখ যুদ্ধ ও ২ ডিসেম্বরও সারা দিন যুদ্ধ অব্যাহত থাকে। তারপর পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটে একপর্যায়ে ঠাকুরগাঁও শহরে অবস্থান নেয়। মুক্তিযোদ্ধারা মিত্রবাহিনীর সহায়তায় ভুল্লি পার হয়ে ঠাকুরগাঁও শহরের দিকে যাওয়ার সময় রাস্তায় মাইন পুঁতে রাখা হয়েছে। ২ ডিসেম্বর রাতভর মাইন অপসারণ ও প্রচণ্ড আক্রমণ প্রতিহত করে এবং পাকিস্তানি বাহিনী ঠাকুরগাঁও শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়। ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর ভোরে শত শত মুক্তিযোদ্ধা ফায়ার করতে করতে শহরে ঢুকে পড়ে। তখন জনশূন্য ছিল ঠাকুরগাঁও। পরে বিজয়ের উল্লাসে শত শত মানুষ জয়বাংলা ধ্বনি দিতে দিতে জনমুখরিত মুক্তি যোদ্ধাদের নিয়ে । আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠে।সেই দিন যেভাবে মূল্যায়ন ও সম্মান করেছিল, সেটি আজো ভোলার মতো নয় এবং স্মৃতি পাতায় অমর হয়ে আছে।।