মো:আব্দুল ওহাব ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:
ঠাকুরগাঁওয়ে চলছে ধান কাটা মারার ধুম। চলে এসেছে নবান্ন, নবান্ন নিয়ে আসে খুশির বার্তা। নতুন ধান ঘরে উঠানোর কাজে ব্যস্ত থাকে কৃষাণ কৃষাণীরা। আর ধান ঘরে উঠলে পিঠে পায়েস খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। পাড়ায় পাড়ায় চলে নবান্ন উৎসব। গ্রাম বাংলায় নতুন এক আবহের সৃষ্টি হয়। নবান্ন উৎসবের সাথে মিশে আছে বাঙালিয়ানার হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সংস্কৃতিক নানা দিক। প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালি জাতি ধর্ম বর্ণকে উপো করে নবান্নকে কেন্দ্র করে উৎসবে মেতে ওঠে। একে অন্যের মধ্যে তৈরি হয় এক সামাজিক মেলবন্ধনের।
এরই ধারাবাহিকতায় ঠাকুরগাঁওয়ের গ্রামমাঞ্চলে চলে নানা উৎসব, নানা আয়োজন। নতুন ধান কাটা আর সেই সাথে প্রথম ধানের অন্ন খাওয়াকে কেন্দ্র করে পালিত হয় এই উৎসব। বাঙালির বার মাসে তের প্লাবন এ যেন সত্যি হৃদয়ের বন্ধনকে আরো গাঢ় করার উৎসব। হেমন্ত এলেই দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ ছেয়ে যায় হলুদ রঙে। এই শোভা দেখে কৃষকের মন আনন্দে নেচে ওঠে। নতুন ফসল ঘরে ওঠার আনন্দ। প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালির জীবনে অগ্রহায়ণ কৃষকের নতুন বার্তা নিয়ে আগমন ঘটে। নবান্ন হচ্ছে হেমন্তের প্রাণ। নতুন ধানের চাল দিয়ে তৈরি করা হয় পিঠা, পায়েস,সহ হরেক নানা রকম খাবার। সুস্বাদু খাবারের গন্ধে ভরে ওঠে চারপাশ। সোনালি ধানের প্রাচুর্য আর বাঙালির বিশেষ অংশ নবান্ন ঘিরে অনেক কবি-সাহিত্যিকের লেখায় উঠে এসেছে প্রকৃতির চিত্র।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানা যায়, এ বছর জেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১ লাখ ৩৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪ লাখ ২৯ হাজার ৭১৬ মেট্রিক টন। যা গত বছরে চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৫ হেক্টর। এর মধ্যে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন।
প্রতি বছর এ সময়টাতে কৃষকের মাঠজুড়ে ধানকাটার ধুম পড়ে যায়। অত্যন্ত ব্যস্ত সময় কাটান এ সময়ে কৃষাণ-কৃষাণীরা। ধান ভাঙার গান ভেসে বেড়ায় বাতাসে, ঢেঁকির তালে মুখর হয় বাড়ির আঙিনা। অবশ্য যান্ত্রিকতার ছোঁয়ায় এখন আর ঢেঁকিতে ধান ভানার শব্দ খুব একটা শোনা যায় না। অথচ খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, ঢেঁকি ছাঁটা চাল দিয়েই হতো ভাত খাওয়া। তার পরও নতুন চালের ভাত নানা ব্যঞ্জনে মুখে দেয়া হয় আনন্দঘন পরিবেশ। তৈরি হয় নতুন চালের পিঠা – পায়েসসহ নানা উপাদান। দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে চলে খাওয়া দাওয়ার ধুম।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুন কহরপাড়া গ্রামের প্রান্তিক কৃষক মো: কামাল হোসেন, সেন্টারহাট গ্রামের সত্যেন্দ্রনাথ রায় জানায়, পিঠা তৈরির জন্য চালোর গুড়া করা হচ্ছে ঘরে ঘরে। মেয়ে জামাই, আত্মীয় স্বজন আর পাড়া প্রতিবেশিকে খাওয়ানো হবে নানা ধরনের পিঠা, পায়েস। খেজুরের রসও সংগ্রহ করা হচ্ছে ।সদর উপজেলার চিলারং মোলানী গ্রামের কৃষক বজলুর রহমান জানায়, ক্ষেত থেকে প্রায় প্রতিদিন ধান কাটা হচ্ছে। কয়েকদিনের মধ্যে সেগুলো ঘরে তোলার পর তাদের উৎসব শুরু হবে। তাই তাদের মনে আনন্দও বেশি। এবছরও বড় পরিসরে নবান্ন উৎসব অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি।উন্নয়ন সংস্থা ইএসডিও’র নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামান বলেন, বাঙ্গালীর হাজার বছরের ঐতিহ্য নবান্ন উৎসব। এই উৎসবকে ধরে রাখতে হবে। তবেই মানুষের সাথে মানুষে ভাতৃত্ব বজায় থাকবে। এসব লালন করতে সরকারি-বে-সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। ব্যক্তিগত উদ্যোগে ইএসডিও প্রতি বছর নবান্ন উৎসব ও পিঠা উৎসব পালন করে থাকে বলে জানান তিনি।